হুমায়ূন আহমেদ একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাকে চেনে না এমন মানুষ বাংলাদেশে খুজে পাওয়া দুষ্কর। তার অসাধারণ কাজের মাধ্যমেই আমরা তাকে চিনতে পেরেছি। তার রয়েছে একাধিক কালজয়ী উপন্যাস যা আমাদের মতো পাঠকদের মনে সারাজীবন রয়ে যাবে। তার হাত ধরে তার উপন্যাসের মাধ্যমে উঠে আসে এমন কিছু চরিত্র যা রাতারাতি মানুষের মনে জায়গা করে নেই। মানুষ ঐ চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি খুজা শুরু করে দেয়। তার অগনিত চরিত্রের মধ্যে জনপ্রিয় দুটি চরিত্র হলোঃ হিমু এবং রুপা। হুমায়ূন আহমেদ তার অনেক উপন্যাস-এ হিমুর বিপরীতে রুপাকে নিয়ে লিখেছেন। যা আমাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। হলুদ হিমু ও নীল রুপা নামেও অনেকের কাছে চরিত্র দুটি পরিচিত। ময়ূরাক্ষী হুমায়ুন আহমেদের লেখা হিমু সিরিজের প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসেই আমরা হিমু এবং রুপার সাথে পরিচিত হই। চলুন হিমু এবং রুপা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
হিমু – Himu

হিমু বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় ও কাল্পনিক চরিত্র। হিমু মূলত একজন বেকার যুবক, যার আচরণে বেখেয়ালী, জীবনযাপনে ছন্নছাড়া ও বৈষয়িক ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন ভাব প্রকাশ পায়।
হিমু চরিত্রের আসল নাম হিমালয়। এ নামটি রেখেছিলেন তার বাবা। লেখক হিমুর বাবাকে বর্ণনা করেছেন একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ হিসেবে, যার বিশ্বাস ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। তিনি মহাপুরুষ তৈরির জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু।
হিমুর পোশাক হল পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী। হলুদ বৈরাগের রঙ বলেই পোশাকের রং হলুদ নির্বাচিত করা হয়েছিল। ঢাকা শহরের পথে-পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম। উপন্যাসে প্রায়ই তার মধ্যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রকাশ দেখা যায়। যদিও হিমু নিজে তার কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা স্বীকার করে না।
আরো দেখুনঃ ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস
হিমুর আচার-আচরণ বিভ্রান্তিকর। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার প্রতিক্রিয়া অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে, এবং এই বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হিমুর অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ। প্রেম ভালবাসা উপেক্ষা করা হিমুর ধর্মের মধ্যে পড়ে। কোন উপন্যাসেই কোন মায়া তাকে কাবু করতে পারে নি। মায়াজালে আটকা পড়তে গেলেই সে উধাও হয়ে যায়।
হিমু উপন্যাসে সাধারণত হিমুর কিছু ভক্তশ্রেণীর মানুষ থাকে যারা হিমুকে মহাপুরুষ মনে করে। এদের মধ্যে হিমুর ফুপাতো ভাই বাদল অন্যতম। মেস ম্যানেজার বা হোটেল মালিক- এরকম আরও কিছু ভক্ত চরিত্র প্রায় সব উপন্যাসেই দেখা যায়। এছাড়াও কিছু বইয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ও খুনি ব্যক্তিদের সাথেও তার সু-সম্পর্ক ঘটতে দেখা যায়। হিমুর একজন বান্ধবী রয়েছে, যার নাম রূপা; যাকে ঘিরে হিমুর প্রায় উপন্যাসে রহস্য আবর্তিত হয়। নিরপরাধী হওয়া সত্ত্বেও সন্দেহভাজন হওয়ায় হিমু অনেকবার হাজতবাস করেছে এবং বিভিন্ন থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।
হুমায়ূন আহমেদের রুপা – Rupa চরিত্র
হিমুর বিপরীতে যেই চরিত্রটি সবার মন কেড়েছে সেটি হলো- রুপা। এই চরিত্রটি নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। রুপা সবসময় হিমুর জন্য অপেক্ষায় করে গিয়েছে। সে হিমুকে অসম্ভব রকম ভালোবাসতো। কিন্তু হিমু কখনো তাকে নয়ে আগ্রহ দেখায় নি। কারন হিমুরা কখনো ভালবাসতে জানে না।
হিমু ও রুপার প্রেমের গল্প

হিমু ও রুপার অতৃপ্ত ভালোবাসা
রূপা: তুমি কি জানো আমি তোমার কথা খুব ভাবি।
হিমু: আমি জানি।
রূপা: সত্যি জানো?
হিমু: হ্যাঁ জানি…!
রূপা: কী করে জানো…?
হিমু: ভালোবাসা টের পাওয়া যায়…।
রূপা: কেন জানি তোমার কথা সবসময় মনে হয়,এর নাম কি ভালোবাসা…?
হিমু: আমার জানা নেই রূপা…!
রূপা: তুমি কি আসবে আমাদের বাসায়..?
হিমু: আসবো…।
রূপা: কখন,,,আসবে…?
হিমু: এক্ষুনি,,,আসছি…।
রূপা: আচ্ছা বেশ আসো…!
হিমু: তোমার কী কোন নীল রঙের শাড়ি আছে…?
রূপা: কেন,,,বলতো…?
হিমু: যদি থাকে তাহলে নীল রঙের শাড়ি
– পরে গেটের কাছে থেকো।
আমি এলে গেট খুলে দিবে…!
রূপা: আচ্ছা…।
হিমু গেলো না! আবার মাস খানিকের জন্য ডুব দিলো, কারণ ভালোবাসার মানুষদের খুব কাছে কখনো না কি যেতে নেই। তাতে নাকি ভালোবাসা কমে যায়।
হুমায়ূন আহমেদের ৮০টি উক্তি/বানী দেখতে ক্লিক করুন।
আমি কখনো রূপাকে চিঠি লিখি নি।
একবার হঠাৎ একটি চিঠি লিখতে ইচ্ছা হলো । লিখতে বসে দেখি কী লিখব ভেবে পাচ্ছি না। অনেকবার করে একটি লাইন লিখলাম :
রূপা তুমি কেমন আছ?
সমস্ত পাতা জুড়ে একটি মাত্র বাক্য।
সেই চিঠির উত্তর রূপা খুব রাগ করে করে লিখল :
তুমি এত পাগল কেন? এতদিন পর একটা চিঠি লিখলে, তারমধ্যেও পাগলামি । কেন এমন কর? তুমি কি ভাবো এইসব পাগলামি দেখে আমি তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসব? তোমার কাছে আমি হাতজোড় করছি–স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ কর। ঐদিন দেখলাম দুপুরের কড়া রোদে কেমন পাগলের মতো হাঁটছ। বিড়বিড় করে আবার কীসব যেন বলছ। দেখে আমার কান্না পেয়ে গেল। তোমার কী সমস্যা তুমি আমাকে বল।
আমার সমস্যার কথা রূপাকে কি আমি বলতে পারি? আমি বলতে পারি–আমার বাবার স্বপ্ন সফল করার জন্য সারাদিন আমি পথে পথে ঘুর। মহাপুরুষ হবার সাধনা করি। যখন খুব ক্লান্তি অনুভব করি তখন একটি নদীর স্বপ্ন দেখি। যে নদীর জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে এক জন তরুণী ছুটে চলে যায়। একবার শুধু থমকে দাঁড়িয়ে তাকায় আমার দিকে। তার চোখে গভীর মায়া ও গাঢ় বিষাদ। এই তরুণীটি আমার মা। আমার বাবা যাকে হত্যা করেছিলেন।
এই সব কথা রূপাকে বলার কোনো অর্থ হয় না । বরং কোন-কোনোদিন তরঙ্গিণী স্টোর থেকে তাকে টেলিফোন করে বলি–রূপা, তুমি কি এক্ষুণি নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে তোমাদের ছাদে উঠে কার্নিশ ধরে নিচের দিকে তাকাবে? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা্ করছে। একটুখানি দাঁড়াও। আমি তোমাদের বাসায় সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাব।
আমি জানি রূপা আমার কথা বিশ্বাস করে না, তবু যত্ন করে শাড়ি পরে। চুল বাঁধে। চোখে কাজলের ছোঁয়া লাগিয়ে কার্নিশ ধরে দাঁড়ায়। সে অপেক্ষা করে। আমি কখনো যাই না।
আমাকে তো আর দশটা সাধারণ ছেলের মতো হলে চলবে না। আমাকে হতে হবে অসাধরণ। আমি সারাদিন হাঁটি। আমার পথ শেষ হয় না। গন্তব্যহীন যে যাত্রা তার কোনো শেষ থাকার তো কথাও নয়।
—ময়ূরাক্ষী
রুপা কে আমি দেখিনি, তার ছবি দেখেছি,কী মিষ্টি কী শান্ত চেহারা। পটে আঁকা ছবি। রূপা যেনো হারিয়ে না যায় তার জন্যেই হিমুর বান্ধবী হিসেবে আমি তাকে নিয়ে আসি। হিমু কে নিয়ে লেখা প্রতিটি উপন্যাসে রূপা আছে। আমরা কাউকে হারাতে চাই না, কিন্তু সবাইকেই হারাতে হয়।
—হুমায়ূন আহমেদ (মাতাল হাওয়া)
হিমু ও রুপার কথোপকথন
মজিদ বোধহয় রিকশা ঠিক করে ফেলেছে। তবে ঠিক করলেও সে আমাকে বলবে না । অপেক্ষা করবে। এর মধ্যেই অতি দ্রুত রূপার সঙ্গে একটা কথা সেরে নেয়া দরকার ।
আমি টেলিফোন করতেই রূপার বাবা ধরলেন । আমি গম্ভীর গলায় বললাম, এটা কি রেলওয়ে বুকিং?
তিনি ক্ষিপ্ত গলায় বলেলন, ফাজিল ছোকরা , হু আর ইউ? কী চাও তুমি?
রূপাকে দেবেন?
রাসকেল, ফাজলামি করার জায়গা পাও না । আমি তোমাকে এমন শিক্ষা দেব।
আপনি এত রেগে গেছেন কেন?
শাট আপ ।
আমি ভদ্রলোককে আরো খানিকক্ষণ হইচই করার সুযোগ দিলাম। আমি জানি হইচই শুনে রূপা এসে টেলিফোন ধরবে। হলোও তাই , রূপার গলা শোনা গেল- । সে করুণ গলায় বলল, তুমি চলে এস।
কখন?
এই এখন । আমি বারান্দায় দাড়িয়ে থাকব।
আচ্ছা আসছি।
অনেকবার আসছি বলেও তুমি আস নি- এইবার যদি না আস তাহলে ….
তাহলে কী?
রূপা খানিকক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল,আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকব।
রূপার বাবা সম্ভবত তার হাত থেকে টেলিফোনটা কেড়ে নিলেন। খট করে রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দ হলো । আজ ওদের বাড়িতে ভূমিকম্প হয়ে যাবে। রূপার বাবা,মা,ভাই-বোন কেউ আমাকে সহ্য করতে পারে না । রূপার বাবা তাঁর দারোয়ানকে বলে রেখেছেন কিছুতেই যেন আমাকে ঐ বাড়িতে ঢুকতে না দেয়া হয়। আজ কী হবে কে জানে?
—ময়ূরাক্ষী
হিমু রুপা উপন্যাস
হুমায়ূন আহমেদ-এর বিভিন্ন উপন্যাসে হিমু এবং রুপার উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে উপস্থাপ্ন করা হয়েছে ময়ূরাক্ষী উপন্যাসে। এই উপন্যাসে হিমু রুপাকে ময়ূরাক্ষী বলে ডাকতো। ময়ূরাক্ষী উপন্যাসটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করুন এখানে ক্লিক করে।
হুমায়ূন আহমেদ-এর আরও কিছু বই
- Pile Potka পিলে-পটকা – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Ghoshona ঘোষণা – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Apon Piasi আপন – পিয়াসী – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Sindhu2 সিন্ধুঃ দ্বিতীয় তরঙ্গ – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Oprup Se Duronto অপরূপ সে দুরন্ত – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Dupur Ovisar দুপুর-অভিসার – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Bondhon বন্ধন – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Manos Bodhu মানস-বধূ – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Niruddesher Jatri নিরুদ্দেশের যাত্রী – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
- Hindi Gan হিন্দি গান – কাজী নজরুল ইসলাম Kazi Nazrul Islam
আমার প্রিয় ২জন মানুষ।
হুমায়ূন আহমেদের অমর সৃষ্টি(হিমু)।হিমুকে যে একবার বুঝতে শুরু করবে সেই হিমু পড়ে মজা পাবে।আমার মতে হিমুর দ্বারা হুমায়ূন আহমেদ (কিশোর/যুবক)-দের কিছু শিক্ষণীয় বিষয় বোঝাতে চেয়েছেন।যারা সত্যিকারের পাঠক/পাঠিকা তারা বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেন।
হুমায়ূন আহমেদের অমর সৃষ্টি(হিমু)।হিমুকে যে একবার বুঝতে শুরু করবে সেই হিমু পড়ে মজা পাবে।আমার মতে হিমুর দ্বারা হুমায়ূন আহমেদ (কিশোর/যুবক)-দের কিছু শিক্ষণীয় বিষয় বোঝাতে চেয়েছেন।যারা সত্যিকারের পাঠক/পাঠিকা তারা বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেন।