Panchami পঞ্চমী– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর Rabindranath Tagor

Rate this Book

পঞ্চমী
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভাবি বসে বসে
গত জীবনের কথা ,
কাঁচা মনে ছিল
কী বিষম মূঢ়তা ।
শেষে ধিক্‌কারে বলি হাত নেড়ে ,
যাক গে সে কথা যাক গে ।
তরুণ বেলাতে যে খেলা খেলাতে
ভয় ছিল হারবার ,
তারি লাগি , প্রিয়ে , সংশয়ে মোরে
ফিরিয়েছ বার বার ।
কৃপণ কৃপার ভাঙা কণা একটুক
মনে দেয় নাই সুখ ।
সে যুগের শেষে আজ বলি হেসে ,
কম কি সে কৌতুক
যতটুকু ছিল ভাগ্যে ,
দুঃখের কথা থাক্‌ গে ।

পঞ্চমী তিথি
বনের আড়াল থেকে
দেখা দিয়েছিল
ছায়া দিয়ে মুখ ঢেকে ।
মহা আক্ষেপে বলেছি সেদিন ,
এ ছল কিসের জন্য ।
পরিতাপে জ্বলি আজ আমি বলি ,
সিকি চাঁদিনীর আলো
দেউলে নিশার অমাবস্যার
চেয়ে যে অনেক ভালো ।
বলি আরবার , এসো পঞ্চমী , এসো ,
চাপা হাসিটুকু হেসো ,
আধখানি বেঁকে ছলনায় ঢেকে
না জানিয়ে ভালোবেসো ।
দয়া , ফাঁকি নামে গণ্য ,
আমারে করুক ধন্য ।
আজ খুলিয়াছি
পুরানো স্মৃতির ঝুলি ,
দেখি নেড়েচেড়ে
ভুলের দুঃখগুলি ।
হায় হায় এ কী , যাহা কিছু দেখি
সকলি যে পরিহাস্য ।
ভাগ্যের হাসি কৌতুক করি
সেদিন সে কোন্‌ ছলে
আপনার ছবি দেখিতে চাহিল
আমার অশ্রুজলে ।
এসো ফিরে এসো সেই ঢাকা বাঁকা হাসি ,
পালা শেষ করো আসি ।
মূঢ় বলিয়া করতালি দিয়া
যাও মোরে সম্ভাষি ।
আজ করো তারি ভাষ্য
যা ছিল অবিশ্বাস্য ।
বয়স গিয়েছে ,
হাসিবার ক্ষমতাটি
বিধাতা দিয়েছে ,
কুয়াশা গিয়েছে কাটি ।
দুখদুর্দিন কালো বরনের
মুখোশ করেছে ছিন্ন ।
দীর্ঘ পথের শেষ গিরিশিরে
উঠে গেছে আজ কবি ।
সেথা হতে তার ভূতভবিষ্য
সব দেখে যেন ছবি ।
ভয়ের মূর্তি যেন যাত্রার সঙ্‌ ,
মেখেছে কুশ্রী রঙ ।
দিনগুলি যেন পশুদলে চলে ,
ঘণ্টা বাজায়ে গলে ।
কেবল ভিন্ন ভিন্ন
সাদা কালো যত চিহ্ন ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *