কান্না
– শামসুর রাহমান
আমারই কাঁটার ঘায়ে গৌরী তুমি কেঁদেছ সে-রাতে
নিজেকে অকূল নদী করে; সে কান্নার রুদ্ধ জল
অকস্মাৎ রাত্রির হৃদয় জুড়ে করে ছল ছল,
স্তব্ধতা ছাপিয়ে ওঠে, মিশে যায় তিমির-প্রপাতে।
আমি নিজে নিরন্তর অন্তরের নির্দয় সংঘাতে
বিপর্যস্ত, নিজেকেই ছিঁড়ি-খুঁড়ি, তোমাকেও কষ্ট
দিই খুব জানি না কিসের জন্যে। হায়, আমি নষ্ট,
বিবেচনাহীন লোক, অহেতুক যে ভাঙনে মাতে।
যখন তোমার বুক চিরে অসিত পাথর-চাপা
কান্নার দুর্বার জল নিমেষে বেরিয়ে পড়ে আর
তুমি থর কাঁপো অন্তর্গত শীতে, অসহায়
লাগে বড়ো নিজেকে তখন; আজ কোনো লুকোছাপা
নয়, সরাসরি বলা যাক-আমাদের মনোভার
ঘুচে যাবে, গৌরী শোনো, আহত পাখিও গান গায়!
(তোমাকেই ডেকে ডেকে রক্তচক্ষু কোকিল হয়েছি কাব্যগ্রন্থ)