Jol জল– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর Rabindranath Tagor

Rate this Book

জল
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ধরাতলে
চঞ্চলতা সব-আগে নেমেছিল জলে ।
সবার প্রথম ধ্বনি উঠেছিল জেগে
তারি স্রোতোবেগে ।
তরঙ্গিত গতিমত্ত সেই জল
কলোল্লোলে উদ্‌বেল উচ্ছল
শৃঙ্খলিত ছিল স্তব্ধ পুকুরে আমার ,
নৃত্যহীন ঔদাসীন্যে অর্থহীন শূন্যদৃষ্টি তার ।
গান নাই , শব্দের তরণী হোথা ডোবা ,
প্রাণ হোথা বোবা ।
জীবনের রঙ্গমঞ্চে ওখানে রয়েছে পর্দা টানা ,
ওইখানে কালো বরনের মানা ।
ঘটনার স্রোত নাহি বয় ,
নিস্তব্ধ সময় ।
হোথা হতে তাই মনে দিত সাড়া
সময়ের বন্ধ-ছাড়া
ইতিহাস-পলাতক কাহিনীর কত
সৃষ্টিছাড়া সৃষ্টি নানামতো ।
উপরের তলা থেকে
চেয়ে দেখে
না-দেখা গভীরে ওর মায়াপুরী এঁকেছিনু মনে ।
নাগকন্যা মানিকদর্পণে
সেথায় গাঁথিছে বেণী ,
কুঞ্চিত লহরিকার শ্রেণী
ভেসে যায় বেঁকে বেঁকে
যখন বিকেলে হাওয়া জাগিয়া উঠিত থেকে থেকে ।
তীরে যত গাছপালা পশুপাখি
তারা আছে অন্যলোকে , এ শুধু একাকী ।
তাই সব
যত কিছু অসম্ভব
কল্পনার মিটাইত সাধ ,
কোথাও ছিল না তার প্রতিবাদ ।

তার পরে মনে হল একদিন ,
সাঁতারিতে পেল যারা পৃথিবীতে তারাই স্বাধীন ,
বন্দী তারা যারা পায় নাই ।
এ আঘাত প্রাণে নিয়ে চলিলাম তাই
ভূমির নিষেধগণ্ডি হতে পার ।
অনাত্মীয় শত্রুতার
সংশয় কাটিল ধীরে ধীরে ,
জলে আর তীরে
আমারে মাঝেতে নিয়ে হল বোঝাপড়া ।
আঁকড়িয়া সাঁতারের ঘড়া
অপরিচয়ের বাধা উত্তীর্ণ হয়েছি দিনে দিনে ,
অচেনার প্রান্তসীমা লয়েছিনু চিনে ।
পুলকিত সাবধানে
নামিতাম স্নানে ,
গোপন তরল কোন্‌ অদৃশ্যের স্পর্শ সর্ব গায়ে
ধরিত জড়ায়ে ।
হর্ষ-সাথে মিলি ভয়
দেহময়
রহস্য ফেলিত ব্যাপ্ত করি ।

পূর্বতীরে বৃদ্ধ বট প্রাচীন প্রহরী
গ্র ন্থি ল শিকড়গুলো কোথায় পাঠাত নিরালোকে
যেন পাতালের নাগলোকে ।
এক দিকে দূর আকাশের সাথে
দিনে রাতে
চলে তার আলোকছায়ার আলাপন ,
অন্য দিকে দূর নিঃশব্দের তলে নিমজ্জন
কিসের সন্ধানে
অবিচ্ছিন্ন প্রচ্ছন্নের পানে ।
সেই পুকুরের
ছিনু আমি দোসর দূরের
বাতায়নে বসি নিরালায় ,
বন্দী মোরা উভয়েই জগতের ভিন্ন কিনারায় ;
তার পরে দেখিলাম , এ পুকুর এও বাতায়ন —
এক দিকে সীমা বাঁধা , অন্য দিকে মুক্ত সারাক্ষণ ।
করিয়াছি পারাপার
যত শত বার
ততই এ তটে-বাঁধা জলে
গভীরের বক্ষতলে
লভিয়াছি প্রতি ক্ষণে বাধা-ঠেলা স্বাধীনের জয় ,
গেছে চলি ভয় ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *