আশা করি হুমায়ূন আহমেদ এর কবিতা প্রেমী সকলে ভালোই আছেন। আজকে আপনাদের সাথে কিছু কবিতা শেয়ার করবো যার লেখক আমাদের সবচেয়ে প্রিয় এবং সবার কাছের মানুষ হুমায়ূন আহমেদ স্যার।
হুমায়ূন আহমেদ এর কবিতা সমগ্র
বাসর – হুমায়ূন আহমেদ
কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে তার সঙ্গে দেখা ।
লোহার তৈরি ছোট্ট একটা ঘর ।
বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোন যোগ নেই ।
ঘরটা শুধু উঠছে আর নামছে ।
নামছে আর উঠছে ।
মানুষ ক্লান্ত হয় –
এ ঘরের কোন ক্লান্তি নেই।
এ রকম একটা ঘরেই বোধহয় বেহুলার বাসর হয়েছিল ।
নিশ্ছিদ্র লোহার একটা ঘর ।
কোন সাপ সেখানে ঢুকতে পারবে না ।
হিস হিস করে বলতে পারবে না, পাপ করো। পৃথিবীর সব আনন্দ পাপে ।
পুণ্য আনন্দহীন । উল্লাসহীন ।
পুণ্য করবে আকাশের ফিরিশতারা ।
কারণ পুণ্য করার জন্যেই তাদের তৈরি করা হয়েছে ।
লোহার সেই ঘরে ঢোকার জন্য সাপটা পথ খুঁজছিলো ।
সেই ফাঁকে বেহুলা তাঁর স্বামীকে বললেন, কি হয়েছে, তুমি ঘামছ কেন ?
আর তখন একটা সুতা সাপ ঢুকে গেলো।
ফিসফিস করে কোন একটা পরামর্শ দিতে গেলো ।
বেহুলা সেই পরামর্শ শুনলেন না বলেই কি লখিন্দরকে মরতে হল ?
তার সঙ্গে আমার দেখা কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে ।
ঘরটা শুধু ওঠে আর নামে ।
আমি তাকে বলতে গেলাম – আচ্ছা শুনুন, আপনার কি মনে হচ্ছে না
এই ঘরটা আসলে আমাদের বাসর ঘর ?
আপনি আর কেউ নন, আপনি বেহুলা ।
যেই আপনি ভালবেসে আমাকে কিছু বলতে যাবেন
ওম্নি একটা সুতা সাপ এসে আমাকে কামড়ে দেবে ।
আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন । দয়া করে কিছু বলবেন না ।
গৃহত্যাগী জোছনা – হুমায়ূন আহমেদ
প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার
আকাশের দিকে তাকাই।
গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে?
বালিকা ভুলানো জোছনা নয়,
যে জোছনায় বালিকারা ছাদের
রেলিং ধরে ছুটোছুটি করতে করতে বলবে,
ও মাগো! কি সুন্দর চাঁদ!
নব দম্পতির জোছনাও নয়,
যে জোছনা দেখে স্বামী গাড়
স্বরে স্ত্রীকে বলবে;
দেখো দেখো,
চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর।
কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাঁতে
জোছনা নয়,
যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে।
কবির জোছনা নয়,
যে জোছনা দেখে কবি বলবেন,
কি আশ্চর্য রুপোর থালার মত চাঁদ।
আমি সিদ্ধার্থের মত
গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি।
যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত
দরজা খুলে যাবে।
ঘরের ভেতর
ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর।
প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব, আর হাঁটব।
পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে,
চারিদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ
ডাকবে আয়, আয়, আয়।
বাবার চিঠি – হুমায়ূন আহমেদ
আমি যাচ্ছি নাখালপাড়ায়।
আমার বৃদ্ধ পিতা আমাকে পাঠাচ্ছেন তাঁর
প্রথম প্রেমিকার কাছে।
আমার প্যান্টের পকেটে সাদা খামে মোড়া বাবার লেখা দীর্ঘ পত্র।
খুব যত্নে খামের উপর তিনি তাঁর প্রণয়িনীর নাম লিখেছেন।
কে জানে চিঠিতে কি লেখা – ?
তাঁর শরীরের সাম্প্রতিক অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা ?
রাতে ঘুম হচ্ছেনা, রক্তে সুগার বেড়ে গেছে
কষ্ট পাচ্ছেন হাঁপানিতে – এইসব হাবিজাবি। প্রেমিকার কাছে
লেখা চিঠি বয়সের ভারে প্রসঙ্গ পাল্টায়
অন্য রকম হয়ে যায়।
সেখানে জোছনার কথা থাকে না,
সাম্প্রতিক শ্বাসকষ্ট বড় হয়ে উঠে।
প্রেমিকাও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর
রোগভুগের কথা পড়তে ভালবাসেন।
চিঠি পড়তে পড়তে দরদে গলিত হন –
আহা, বেচারা ইদানিং বড্ড কষ্ট পাচ্ছে তো…
আমি খুব অল্প কিছু চাই – হুমায়ূন আহমেদ
আমাকে ভালবাসতে হবে না,
ভালবাসি বলতে হবে না,
মাঝে মাঝে গভীর আবেগ
নিয়ে আমার ঠোঁট
দুটো ছুয়ে দিতে হবে না,
কিংবা আমার জন্য রাত
জাগা পাখিও
হতে হবে না,
অন্য সবার মত আমার
সাথে রুটিন মেনে দেখা
করতে হবে না,
কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও
খেতে হবে না,
এত অসীম সংখ্যক “না”এর ভিড়ে
শুধু মাত্র একটা কাজ
করতে হবে আমি যখন
প্রতিদিন এক বার “ভালবাসি” বলব
তুমি প্রতিবার
একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে একটু
খানি আদর মাখা
গলায় বলবে “পাগলি”
সংসার – হুমায়ূন আহমেদ
শোন মিলি।
দুঃখ তার বিষমাখা তীরে তোকে
বিঁধে বারংবার।
তবুও নিশ্চিত জানি,একদিন হবে তোর
সোনার সংসার ।।
উঠোনে পড়বে এসে একফালি রোদ
তার পাশে শিশু গুটিকয়
তাহাদের ধুলোমাখা হাতে – ধরা দেবে
পৃথিবীর সকল বিস্ময়।
কাচপোকা – হুমায়ূন আহমেদ
একটা ঝকঝকে রঙিন কাচপোকা
হাঁটতে হাঁটতে এক ঝলক রোদের মধ্যে পড়ে গেল।
ঝিকমিকিয়ে উঠল তার নকশাকাটা লাল নীল সবুজ শরীর।
বিরক্ত হয়ে বলল,রোদ কেন?
আমি চাই অন্ধকার । চির অন্ধকার
আমার ষোলটা পায়ে একটা ভারি শরীর বয়ে নিয়ে যাচ্ছি-
অন্ধকার দেখব বলে।
আমি চাই অন্ধকার ।চির অন্ধকার
একটা সময়ে এসে রোদ নিভে গেল
বাদুড়ে ডানায় ভর করে নামল আঁধার।
কি গাঢ়,পিচ্ছিল থকথকে অন্ধকার !
কাচপোকার ষোলটা ক্লান্ত পা বার বার
সেই পিচ্ছিল আঠালো অন্ধকারে ডেবে যাচ্ছিল।
তার খুব কষ্ট হচ্ছিল হাঁটতে
তবু সে হাঁটছে-
তাকে যেতে হবে আরও গভীর অন্ধকারে।
যে অন্ধকার-আলোর জন্মদাত্রী।
অশ্রু – হুমায়ূন আহমেদ
আমার বন্ধুর বিয়ে
উপহার বগলে নিয়ে
আমি আর আতাহার,
মৌচাক মোড়ে এসে বাস থেকে নামলাম
দু’সেকেন্ড থামলাম।।
টিপটিপ ঝিপঝিপ
বৃষ্টি কি পড়ছে?
আকাশের অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে?
আমি আর আতাহার
বলুন কি করি আর?
উপহার বগলে নিয়ে আকাশের অশ্রু
সারা গায়ে মাখলাম।
হি হি করে হাসলাম।
কেমন লাগলো আপাদের কাছে কবিতাগুলো? কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন। যেকোন মন্তব্য থাকলেও তাড়াতাড়ি করে ফেলুন।
ধন্যবাদ