Good Morning Bangladesh গুড মর্নিং বাংলাদেশ– শামসুর রাহমান Shamsur Rahman

Rate this Book

গুড মর্নিং বাংলাদেশ
– শামসুর রাহমান

গুড মর্নিং বাংলাদেশ, সুপ্রভাত,
হাউ ডু ইউ ডু?
সুপ্রভাত সাতরওজা, মাহুৎটুলি নবাবপুর,
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পুরানা পল্টন;
সুপ্রভাত বাগেরহাট, মহাস্থানগড়, ময়নামতি,
সুপ্রভাত পলাশতলী, পাড়াতলী,
সুপ্রভাত আদিয়াবাদের খাল, তাল তমাল হিন্তাল,
নিতাই জেলের জাল, কাশেম মাঝির নাও,
বঁইচি ফুল, কামেলার কানের দুল,
সুপ্রভাত বরিশাল, সুনামগঞ্জ তেঁতুলিয়া, টেকনাফ,
সুপ্রভাত বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা,
সুরমা, কর্ণফুলী।
গুড মর্নিং বাংলাদেশ, সুপ্রভাত,
তুমি কেমন আছো?
বাংলাদেশ, কখনো তুমি ডুরে শাড়ি পরে
ধান ভানো, কখনো জীন্‌স পরে মেতে ওঠো
ডিসকো নাচে।
কখনো তুমি কলসি কাঁখে জলকে যাও, কখনোবা
পুকুরঘাটে গল্প করো, সুন্দর একটা পাখি দেখে ভাসো
খুশির ঢেইয়ে, গ্রীষ্মের দুপুরে তালপাতার
পাখা দিয়ে বাতাস ক’রে
ঘুম পাড়াও পঞ্চম সন্তানকে; পান, সুপুরি এগিয়ে দাও
অতিথির দিকে, রাঁধো পাব্‌দা মাছের সালুন;
পৌষালী রাতে একা একা তৈরী করো
নক্‌শি কাঁথা। দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশ, যারা তোমার সংস্কৃতির পাছায়
চিমটি কাটে, ঘষে দেয় বিষলতা,
আল্লাহ তাদের হায়াত দরাজ করুন।
যারা তোমার বাজু থেকে কেয়ূর,
নাক থেকে নোলক আর নাকছাবি,
গলা থেকে হাঁসুলি,
কোমর থেকে বিছাহার খুলে নিয়ে
পাচার করে দেশান্তরে,
আল্লাহ তাদের হায়াত দরাজ করুন,
যেসব ধাপ্পাবাজ সুদিনের সপক্ষে মিথ্যার থুতু ছিটায়,
আল্লাহ তাদের হায়াত দরাজ করুন
শোনো বাংলাদেশ, স্বপ্নের ফেনা লেগে তোমার চোখ
এমন অন্ধ হয়ে যায়নি যে, তুমি
দেখতে পাচ্ছো না শকুনের ঝাঁক বড়শির মতো নখ দিয়ে
আকাশের উদর ছিঁড়ে খুঁড়ে হিঁচড়ে টেনে আনছে
মেঘের নাড়িভুঁড়ি;
দেখতে পাচ্ছো না সংসদ ভবন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে,
রাজনীতিবিদগণ জনগণের কাছ থেকে
বিছিন্ন হয়ে বনভোজন করছেন দীর্ঘকাল;
শাসনতন্ত্র কাটা ঘুড়ির মতো ভাসমান,
উন্নয়ন বিশারদগণ পাঁচসালা পরিকল্পনাকে
কুরে কুরে খাচ্ছেন ঘুণের ধরনের।
দেখতে পাচ্ছো না বখাটে বুদ্ধিজীবীদের মাথায়
বেধড়ক উৎসাহে ক্রমাগত হাগছে প্যাঁচা আর বাদুড়,
দেখতে পাচ্ছো না, সাত ঘাট থেকে চেয়ে-চিন্তে-আনা
হে ব্যর্থ অন্নপূর্ণা,

যে, তোমার সন্তানের পাতের ভাত খায় সাত কাকে।
গুড মর্নিং বাংলাদেশ সুপ্রভাত
হাউ ডু ইউ ডু?
তুমি কি জেল্লাদার হ্যাট-কোট-পরা শাঁসালো বিদেশীকে দেখে
তোমার উরুদ্বয় ফাঁক করে দেবে নিমেষে?
আমি আমার আগুন-ওগড়ানো চোখ হ্যামলেটের মতো
এখন সরিয়ে নিচ্ছি বটে, কিন্তু হে ধর্ষিতা,
বারবার আমি আমার লড়াকু হাত-পাগুলোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে
রাখতে পারবো কি?

(অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই কাব্যগ্রন্থ)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *