Bishwer Aloklupto Timirer Antorale Elo বিশ্বের আলোকলুপ্ত তিমিরের অন্তরালে এল– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর Rabindranath Tagor

Rate this Book

বিশ্বের আলোকলুপ্ত তিমিরের অন্তরালে এল
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিশ্বের আলোকলুপ্ত তিমিরের অন্তরালে এল
মৃত্যুদূত চুপে চুপে, জীবনের দিগন্ত আকাশে
যত ছিল সূক্ষ্ম ধূলি স্তরে স্তরে দিল ধৌত করি
ব্যথার দ্রাবক রসে দারুণ স্বপ্নের তলে তলে
চলেছিল পলে পলে দৃঢ়হস্তে নিঃশব্দে মার্জনা ।
কোন্‌ক্ষণে নটলীলা-বিধাতার নব নাট্যভূমে
উঠে গেল যবনিকা। শূন্য হতে জ্যোতির তর্জনী
স্পর্শ দিল একপ্রান্তে স্তম্ভিত বিপুল অন্ধকারে,
আলোকের থরহর শিহরণ চমকি চমকি
ছুটিল বিদ্যুৎবেগে অসীম তন্দ্রার স্তূপে স্তূপে,
দীর্ণ দীর্ণ করি’ দিল তারে। গ্রীষ্মরিক্ত অবলুপ্ত
নদীপথে অকস্মাৎ প্লাবনের দুরন্ত ধারায়
বন্যার প্রথম নৃত্য শুষ্কতার বক্ষে বিসর্পিয়া
ধায় যথা শাখায় শাখায়;—সেইমতো জাগরণ

শূন্য আঁধারের গূঢ় নাড়ীতে নাড়ীতে, অন্তঃশীলা
জ্যোতির্ধারা দিল প্রবাহিয়া। আলোকে আঁধারে মিলি
চিত্তাকাশে অর্ধস্ফুট অস্পষ্টের রচিল বিভ্রম।
অবশেষে দ্বন্দ্ব গেল ঘুচি’। পুরাতন সম্মোহের
স্থূল কারা-প্রাচীর বেষ্টন, মুহূর্তেই মিলাইল
কুহেলিকা। নূতন প্রাণের সৃষ্টি হোলো অবারিত
স্বচ্ছ শুভ্র চৈতন্যের প্রথম প্রত্যূষ অভ্যুদয়ে।
অতীতের সঞ্চয়-পুঞ্জিত দেহখানা, ছিল যাহা
আসন্নের বক্ষ হতে ভবিষ্যের দিকে মাথা তুলি’
বিন্ধ্যগিরি ব্যবধান সম, আজ দেখিলাম
প্রভাতের অবসন্ন মেঘ তাহা, স্রস্ত হয়ে পড়ে
দিগন্ত বিচ্যুত। বন্ধমুক্ত আপনারে লভিলাম
সুদূর অন্তরাকাশে ছায়াপথ পার হয়ে গিয়ে
অলোক আলোকতীর্থে সূক্ষ্মতম বিলয়ের তটে।

(প্রান্তিক কাব্যগ্রন্থ)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *