দশ দিনে কোটিপতি হওয়ার উপায় – কেন পড়বেন?

5/5 - (3 votes)

দশ দিনে কোটিপতি হওয়ার উপায়
লেখক : আহমাদ হুসাইন রিফায়ী
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল ক্বলব
বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
অনুবাদক : ইলিয়াস আশরাফ
সম্পাদক : মারইয়াম শারমিন
পৃষ্ঠা : 184, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা

সম্পদের মোহ মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকা খুবই স্বাভাবিক। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপনের জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তদ্রূপ সম্পদের অত্যধিক মোহ মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগ ও অশান্তির কারণও বটে। সম্পদের মোহ মানুষকে ধ্বংসের চোরাবালিতে নিয়ে যায়। সম্পদ সংগ্রহে কখনো কখনো মানুষ অন্যায় পথে পা বাড়ায়; হালাল হারাম, ঠিক-বেঠিক ও নীতি-নৈতিকতার কোনো ধার ধারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানবজাতির জন্য সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু’। (সুরা আলে ইমরান ১৪) বর্তমান বিশ্বের মানুষ ঊর্ধ্বশ্বাসে সম্পদের পেছনে দৌড়াচ্ছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। যেন সম্পদ অর্জনটাই মানুষের একমাত্র কাজ এবং এর জন্যই তার অস্তিত্ব ও তার জীবন।

সমগ্র বিশ্বের সব মানুষের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে শুধুমাত্র এ লক্ষ্যেই। আজকের পৃথিবীর সব দেশের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাও পরিচালিত হচ্ছে শুধুমাত্র এ লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে। শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা হচ্ছে শুধুমাত্র অর্থ-সম্পদ অর্জনের যোগ্য মেশিন হিসেবে। শুধু এ জন্যই উন্মোচিত হচ্ছে শিক্ষার নতুন নতুন দিগন্ত। কর্মের নতুন নতুন ক্ষেত্র। কেউ নিজেকে বা সন্তানকে যোগ্য অর্থ-সম্পদ অর্জনকারী হিসেবে দেখতে পেলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে এবং বলে বেড়ায় যে, আমার জীবন স্বার্থক, আমি সফল, আমার সব কাজ সমাপ্ত, আমার দায়িত্ব পালন পরিপূর্ণ।

মানুষের সম্পদ প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা কোন সীমা-পরিসীমা নেই। সে যতই পায়, ততই চায়। ক্ষুধা নিবারণের পর অতি লোভনীয় খাবার গ্রহণে মানুষের অনিচ্ছা প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু যদি কোন মানুষের সামনে অগণিত সম্পদ রেখে দিয়ে বলা হয়, এ থেকে তোমার প্রয়োজন মতো গ্রহণ কর। তাহলে দেখা যাবে, সে তখন তার বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত সম্পদ আগলে নিয়ে বসে আছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা পরিপূর্ণ সম্পদ জমা হয় তবে সে তৃতীয় উপত্যকা কামনা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ব্যতীত কিছু পূর্ণ করতে পারবে না। (কিন্তু) যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। (সহীহ মুসলিম, ইফা নং ২২৮৬)

বক্ষমান গ্রন্থ ‘দশ দিনে কোটিপতি হওয়ার উপায়; ধনীরাই কি সুখী? ইসলাম কী বলে?’ আমাদের সামনে বাস্তবিকপক্ষেই ধনী হওয়ার কিছু পন্থা বাতলে দিবে। সেলক্ষ্যে পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত সম্পদশালীদের উপদেশবাক্য ও পরামর্শ-নীতি তুলে ধরবেন। অতঃপর এই সম্পদের সুফল ও কুফলগুলো সবিস্তারে উদাহরণসহ বর্ণনা করবেন। পরিশেষে ধনীদের জীবনে সুখের পরিমাপ কতটুকু এবং আমরা কীভাবে সুখী হতে পারি সে বিষয়ে সুখপাঠ্য আলোচনা করবেন। আশা করি, পাঠক এখান থেকে প্রভূত উপকার লাভ করতে পারবেন এবং দুনিয়া, সম্পদ ও সুখের বাস্তবতা আপনার সামনে ভোরের সূর্যের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ।

মাকতাবাতুল ক্বলব। রুচিশীল প্রকাশনী। খূব অল্প সময়ে কার্যকরী কিছু বই উপহার দিয়ে মন কেড়েছে বোদ্ধা পাঠকদের। পাঠক মহলে তাদের বইগুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই বইটি আশা করি সেই জনপ্রিয়তায় জোয়ার নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা উক্ত বই এবং এই মাকতাবার সাথে সম্পৃক্ত সকলকে এবং পাঠককেও উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন। – ইলিয়াস আশরাফ।

লেখকের ভাবনা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার—যিনি সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ। সালাত ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীদের ওপর।

বইটি পাঠ করার সময়কাল মাত্র দশ দিন। এই অল্প সময়ের মাঝেই পাঠক জানতে পারবেন—মহাবিশ্বের প্রকৃত সম্পদ নামে একজন ব্যক্তি যা যা সংগ্রহ করে, তথা গাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পদ ও অর্থকড়ি—এর কোনোটিই সত্যিকার অর্থে সম্পদ নয়। বরং আসল সম্পদ হলো অন্তরের সুখ। এই সুখ কেবল অর্থ, বৈষয়িক সম্পদ এবং ব্যাংক-ব্যালেন্সের মাধ্যমে অর্জিত হয় না, বরং তা অর্জিত হয় অন্তরের প্রশান্তি এবং ইহকালীন ও পরকালীন আনন্দ-তৃপ্তি লাভের মাধ্যমে।

অর্থ তথা পয়সাকড়ি একজন ব্যক্তির প্রাত্যহিক প্রয়োজন মেটানোর উপকরণ মাত্র। যা সে অল্প পরিশ্রমে, দিনের কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করে কিংবা সারাজীবন খেটে সংগ্রহ করতে পারে। যদিও এত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এই যে বিপুল ধন সম্পদ ও প্রচুর ব্যাংক-ব্যালেন্স সে সঞ্চয় করল, এর বাস্তবতা হলো—সে নিজেই হয়তো একদিন এসব ছেড়ে চলে যাবে নতুবা এগুলোই তাকে ছেড়ে দেবে।

দারিদ্র্যতা যেমন নিজেই অসুখের কারণ হয় না, তেমনি ধন-সম্পদও সুখের মূল নয়। দারিদ্র্যতা অথবা ধনাঢ্যতা আমাদের সুখী কিংবা অসুখী বানায় না। বরং আমরা এর বিপরীত দৃশ্যই প্রত্যক্ষ করি বরাবর। তবে দুটো থেকে অর্জিত ফলাফল মানুষকে সুখী কিংবা অসুখী বানাতে পারে। যেমন, দারিদ্র্যতা মানুষের প্রতিভাকে উদ্ভাসিত করে আর বিলাসিতা তাকে করে দেয় শ্বাসরুদ্ধ। দরিদ্র হওয়া কোনো পাপ নয়। পাপ হলো— ধনী হওয়ার পর অন্যদের মানুষ মনে না করা কিংবা তাদেরকে নিজের প্রবৃত্তি ও কামনা অনুযায়ী চালিত দেখতে চাওয়া।

কোনো সমাজে তীব্র দারিদ্র্যতা ও বিকট ধনাঢ্যতা একত্রিত হলে, আজ হোক বা কাল সেখানে বিস্ফোরণ ঘটবেই। একটি সমাজে বিদ্যমান সম্পদ দিয়ে কখনোই তার সমৃদ্ধির পরিমাপ করা হয় না। বরং করা হয় চিন্তা-চেতনাকে মূল্যায়ন করে। অতিরিক্ত প্রাচুর্যতা যেমন মানুষকে অসুখী করে তোলে, তেমনি তীব্র দারিদ্র্যতাও মানুষের অসুখের কারণ হতে পারে।

যেসব ধনীরা মনে করে— গরিবরাই প্রকৃত সুখী, তারা কি ওইসব গরিবদের চেয়েও বোকা, যারা মনে করে ধনীরাই প্রকৃত সুখী? বিপরীতে, যেসব গরিবরা মনে করে—ধনীরাই বুঝি সুখী, তারা কি ওইসব ধনীদের চেয়েও বুদ্ধিমান, যারা মনে করে গরিবরাই সত্যিকার অর্থে সুখী?

ধনাঢ্য কিংবা দারিদ্র্যতা একটি পরীক্ষা। দুনিয়াতে মানুষ নিজ নিজ ভাগ্য অনুপাতে পরীক্ষায় পতিত হবে। দুনিয়াতে এসব বণ্টিত হয় বিপদাকারে। যেমন: একজন ফকির তো আরেকজন ধনী; একজন শক্তিশালী তো অপরজন দুর্বল; একজন বিচক্ষণ তো আরেকজন বোকা; একজন দেখতে সুন্দর তো আরেকজন কুৎসিত। দুনিয়াতে এসব বিপদরূপে বিতরণ করা হয়। ধন-সম্পদ যেমন ধনীদের জন্য পরীক্ষা। তেমনি গরিবের পরীক্ষা হলো দারিদ্র্যতা। প্রতিটি মানুষই নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা তদবির চালিয়ে যায়। যদি কাঙ্ক্ষিত সম্পদ অর্জন করতে না পারে, তা হলে তার জন্য পরীক্ষা হলো দারিদ্র্যতা। এই পরিস্থিতিতে সে যদি ধৈর্য ধরে, সংযমী হয় এবং সৎ পথে থাকে—তা হলে সে সফলকাম। তেমনিভাবে ধনীর পরীক্ষা হলো সম্পদ। যদি সে তা অন্যদের জন্য ব্যয় করে, বিনয়ী হয় এবং সাহায্য সহযোগিতা করে—তা হলে সে পরীক্ষায় সফল। সুতরাং কে ধনী আর কে গরিব তা নির্ধারণ করা হয় আল্লাহর সামনে পেশ করার পর।

আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এই বইটি যেন উপাদেয় ইলমে পরিণত হয় এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্যই কবুল হয়। আমিন। ড. আহমদ হুসাইন রিফায়ী — আল কুদস।

ধনী-গরিবের আলাপচারিতা

একবার এক ধনী লোক তার বিলাসবহুল গাড়ি থেকে নামলেন। ঠিক সামনেই দেখলেন এক গরিব লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি কারো জন্য অপেক্ষা করছে, যে তাকে কাজ দেবে। দুয়েকদিনের জন্য ক্ষেতে বা দোকানে কিংবা কোনো বিল্ডিং নির্মাণের কাজ। ধনী লোকটি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

ধনী: তোমার কাছে যা আছে তা আমায় দেবে? বিনিময়ে আমার যা আছে সব তুমি পাবে।

গরিব: এমন কী-ই বা আছে আমার কাছে, যা আপনাকে বিনিময় হিসেবে

দেবো?

ধনী: তোমার কাছে অঢেল আছে, কিন্তু তুমি বুঝতে পারছ না।

গরিব: আপনি নিশ্চিত মজা করছেন। শুনুন, আমার কাছে কিছুই নেই। ধনী: তোমার স্ত্রী নেই? সন্তানাদি? শরীর-স্বাস্থ্যও কি ভালো না? গরিব: হাঁ, এসব তো আছেই।

ধনী: দেখো, আমার অনেক সম্পদ আছে। আছে বিশাল প্রাসাদ। ক্ষেত খামারেরও কমতি নেই। তবে এরচেয়েও দামী জিনিসের অভাব আছে আমার। তুমি তা হলে চুক্তিটি করতে রাজি?

গরিব: আপনি কোন চুক্তির কথা বলছেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি মানুষটা তো ভারী অদ্ভুত!

ধনী: আমি তোমাকে আমার এই গাড়ি, সহায় সম্পদ, প্রাসাদ এবং আমার ব্যবসা-বাণিজ্য সব দিয়ে দেবো তোমার কাছে থাকা একটি নিয়ামতের বিনিময়ে!

গরিব: কী সেই নিয়ামত?

ধনী: আত্মার প্রশান্তি ও ঘণ্টাখানেক অবসর!

তখন গরিব লোকটি চিন্তিত ভঙ্গীতে মাথা নিচু করে ফেলল।

এবার আত্মগর্বিত অহংকারী কোটিপতি লোকটি বলল: হে জিনিস (অর্থাৎ গরিব), সমস্ত সম্পদ, প্রাসাদ এবং সেখানে থাকা তোমার মতো দাসদের দেখেছ তুমি? এরা সবাই আমার হাতের সামান্য ইশারাতেই ছুটে আসে। সবকিছু আমার একার মালিকানা। এখানে আমার ওপর কারও কোনো অবদান নেই। নিজের শ্রম, ঘাম, জ্ঞান ও দূরদর্শিতা দিয়ে এসব আমি কামাই করেছি।

গরিব: শুনুন, আপনার সমুদয় সম্পদের সাথে আমার কোনো লেনাদেনা নেই। আপনি এসবের সেবক মাত্র। যতদিন আপনার সময় আছে, ততদিন আপনি এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন।

কোটিপতি রেগে বলল: হয়েছে হয়েছে। হিংসায় তোমার অন্তর জ্বলে যাচ্ছে। তোমার মতো লোক এমন কথা বলার সাহস কোথায় পায়? কিন্তু আমি তোমাকে মোটেও তিরস্কার করব না। দারিদ্র্যতাই হলো অকৃতজ্ঞতার উৎস!

গরিব মুচকি হেসে জবাব দিলো: আপনি আপনার সেই অলীক কল্পনা নিয়েই পড়ে আছেন, যা আপনাকে বলছে—আপনি আসলেই গৌরব অর্জন করে ফেলেছেন। কিন্তু বাস্তবে আপনি বিভ্রান্তিতে আছেন। একটি উত্তম লোকমাই আমার জন্য যথেষ্ট। সারারাত প্রশান্তিতে ঘুমাই, মাথায় কোনো দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খায় না।

কোটিপতি এবার সহাস্যে বলল: তুমি যে খাবার খাও তাকে ‘উত্তম’ বলছ? তুমি তো দেখি পাগলের প্রলাপ বকছ! আমি প্রতিদিন যত রকমের খাবার খাই, তা যদি তুমি চোখে দেখতে, তা হলে বুঝতে তুমি যা খাও তা অন্য যে কোনো জিনিস হতে পারে। কিন্তু তাকে মোটেও খাবার বলা যায় না।

|আরো পড়তে অথবা দেখতে – অবশ্যই বইটির অরিজিনাল কপি সংগ্রহ করুন। ধন্যবাদ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *