তাও তে চিং

5/5 - (1 vote)
সহজিয়া পথ : তাও তে চিং
আজ হতে ২৬০০/২৭০০ বছর পূর্বে মহান দার্শনিক লাও ৎস শিখিয়েছেন কিভাবে প্রতিযোগীতাহীন শৈল্পিক নির্জনতার ও নিরাসক্ত আনন্দের মধ্যে সুখী জীবনযাপন করতে হয়। কনফুসিয়াসের সমসাময়িক এ চৈনিক দার্শনিক সহজ-সরল ও পাশবিক উত্তেজনাহীন ভরপুর সুখী জীবনের কথা বলে গেছেন। তিনি নাগরিক জীবন হতে ছুটি নিতে বা জীবন সংগ্রাম হতে পলায়ন করতে বলেন নি, দিয়েছেন উদ্বেগ-উৎকন্ঠাহীন নিরাসক্ত আনন্দঘন জীবনের সন্ধান। তিনি বলেছেন মহান তাও অর্জনের কথা।
তাও সংজ্ঞায়নের বাইরে এক স্বাধীন সার্বভৌম, যাকে অনুভবে পাওয়া যায়, সাধনা করে অর্জন করে নিতে হয়। লাও ৎস তার ছোট ছোট পংক্তিমালার মাধ্যমে তাও খুঁজে পাওয়ার পথের সন্ধান দিয়েছেন।
“যদি বা মুক্ত হও বাসনা থেকে
তবে রহস্যকে পাবে
যদি পড়ে থাক বাসনাকে নিয়ে কেবলই পাবে প্রকাশ্যকে”/
তাও এর সন্ধান দেখেছেন লাও ৎস নিরাসক্ততার মাঝে—
/ “যখন কিছু জাগে জাগতে দেন
যখন কিছু লুপ্ত হয় বিলুপ্ত হতে দেন—
তিনি প্রত্যাশা ছাড়াই কাজ করে যান’’। /
“কিছু না, অনুশীলন করো, কোন চেষ্ঠা ছাড়াই সবকিছু পাবে”।
তাও অর্জনে লাও ৎস বলেছেন সঠিক কর্মপন্থার কথা । কি করতে হবে আর কি করা উনুচিত।
“বাচাল হবে যতটা বেশি
ততবেশি কম পাবে তাকে,
অতএব কেন্দ্রে এসে মৃদুবাক হয়ে যাও”।/
“সে বিসর্জন দেয় অহং,
তাই সে পরিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ”। /
“ অর্থ ও নিরাপত্তার জন্য যদি বেশি বেশি ছুঁটে বেড়াও ,
দেখবে তোমার হৃদয়টি আর নেই”। /
“অতএব গুরু থাকেন প্রশান্ত
সকল বেদনার মধ্যে”।
লাও ৎস ভেবে দেখেছেন জাগতিক খ্যাতির মোহ বিভ্রান্তিকর। আজো মানুষ সস্তা জনপ্রিয়তার মোহে ব্যাক্তিত্ব ও সাতন্ত্র্যতা বিসর্জন দেয় অকাতরে। অন্যকে সামনে রেখে নিজেকে গড়ে তোলা বা নিজের অর্জন অন্যের নিক্তিতে পরিমাপ করা উচিৎ নয়।
“যদি গ্রাস করে জনরুচি
হয়ে যাবে জনতার ক্রীতদাস”/
“যদি বোকারা না হাসে, তবে জেনে নিও, তা নয় প্রকৃত তাও”/
তিনি শাসক ও নেতার গুনাবলীর সন্ধান দিয়েছেন। একটি দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা কেমন হলে শান্তি নেমে আসে সেটাও ইংগিত করেছেন। দেশকে নিয়ন্ত্রণে সব সমস্যার সমাধান দ্রুত ও একবারে করতে মানা করেছেন, বলেছেন এটি ছোট মাছ বড় তাপে ভাজার মত। পুড়ে যাবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।
“নিয়ন্ত্রণবিহীন নেতৃত্ব
অধিকারবিহীন অর্জন”/
“তাও এ লুপ্ত হলে প্রথমে আসে ভালো
ভালোয় লুপ্ত হলে আসে নৈতিকতা
নৈতিকতা লুপ্ত হলে আসে প্রথা
প্রথা হচ্ছে সত্যের আবর্জনা
সকল সংঘাতের সূত্রধর”/
“তবে দেশ ডুবে গেলে নৈরাজ্যে জন্ম নেয় দেশপ্রেম”/
“জনতাকে বিশ্বাস কর
তাদের থাকতে দাও নিজের মত”/
“শক্তি হচ্ছে মেনে নেয়ার ব্যাকারণ”
ছোট্ট জীবনে সব পেতে হবে, সব নিজের আয়ত্বে আনতে হবে , দেখিয়ে দিতে হবে সবাইকে। এ দেখানোর প্রতিযোগিতা এক প্রহেলিকা। আমরা যেন এ প্রহেলিকার মধ্যে নিপতিত না হই।
” তিনি সবকিছু আসতে দেন
সবকিছুকে যেতেও দেন
তার হৃদয় যেন এক খোলা আকাশ”।/
“গুরুর মনে পূর্ণতার জন্য হাহাকার নেই”
“নিজেকে প্রকাশ কর পুরোপুরি
তারপর চুপ থাক”
লাও ৎস বলেছেন গভীর জ্ঞানচর্চা ও অভিজ্ঞতার মধ্যে নিজেকে শুদ্ধ করতে। জ্ঞানের চর্চা ও অভিজ্ঞতার আধিক্য ছাড়া পরম আরাধ্য তাওকে অর্জন করা যায় না।
“জানার ভান করা একটি অসুখ
প্রথমেই অনুভব কর তুমি অসুস্থ
তারপর আগাও স্বাস্থ্যের পথে”/
“যারা তার ভুল ধরিয়ে দেন
তাদের তিনি মহান শিক্ষক হিসেবে নেন”/
“অন্যকে জানাকে বলে বুদ্ধি
নিজেকে জানা মানে সত্যিকারের প্রজ্ঞা”/
সেমেটিক ধর্মগুলো খবরাখবর চীনে আসে নাই। ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মের তখনো জন্ম হয়নি। লাও ৎস বলেছেন-
“যখন তাদের নিজেদের প্রতি থাকেনা বিশ্বাস
তখন তারা বিশ্বাস স্থাপন করে নানা অবতারে”
মহান লাউ ৎস মহাসত্য ও আরাধ্য তাও এর সন্ধান করতে বলেছেন। তিনি ছিলেন সক্রেটিসের সমসাময়িক। কিন্তু সম্পূর্ন আলাদা ভাবে নিজেকে জানতে বলেছেন। অন্ধকারের মাঝে দেখতে পারাই স্পষ্ঠতা। বলছেন নিজের বুদ্ধিমত্তাইন নিজের সামর্থ্য। যা আছে তা নিয়ে তৃপ্ত থাকতে চেষ্ঠা করাটাই তাও অর্জনের দিকে এগিয়ে দেয়।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *