উপকথা
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মেঘের আড়ালে বেলা কখন যে যায়।
বৃষ্টি পড়ে সারাদিন থামিতে না চায় ।
আর্দ্র – পাখা পাখিগুলি গীতগান গেছে ভুলি ,
নিস্তব্ধে ভিজিছে তরুলতা ।
বসিয়া আঁধার ঘরে বরষার ঝরঝরে
মনে পড়ে কত উপকথা ।
কভু মনে লয় হেন এ – সব কাহিনী যেন
সত্য ছিল নবীন জগতে ।
উড়ন্ত মেঘের মতো ঘটনা ঘটিত কত ,
সংসার উড়িত মনোরথে ।
রাজপুত্র অবহেলে কোন্ দেশে যেত চলে
কত নদী কত সিন্ধু – পার ।
সরোবর – ঘাট আলা, মণি হাতে নাগবালা
বসিয়া বাঁধিত কেশভার ।
সিন্ধুতীরে কত দূরে কোন্ রাক্ষসের পুরে
ঘুমাইত রাজার ঝিয়ারি ।
হাসি তার মণিকণা কেহ তাহা দেখিত না ,
মুকুতা ঢালিত অশ্রুবারি ।
সাত ভাই একত্তরে চাঁপা হয়ে ফুটিত রে ,
এক বোন ফুটিত পারুল ।
সম্ভব কি অসম্ভব একত্রে আছিল সব —
দুটি ভাই সত্য আর ভুল ।
বিশ্ব নাহি ছিল বাঁধা, না ছিল কঠিন বাধা ,
নাহি ছিল বিধির বিধান ,
হাসিকান্না লঘুকায়া শরতের আলোছায়া ,
কেবল সে ছুঁয়ে যেত প্রাণ !
আজি ফুরায়েছে বেলা , জগতের ছেলেখেলা
গেছে আলো – আঁধারের দিন ।
আর তো নাই রে ছুটি , মেঘরাজ্য গেছে টুটি ,
পদে পদে নিয়ম – অধীন ।
মধ্যাহ্নে রবির দাপে বাহিরে কে রবে তাপে,
আলয় গড়িতে সবে চায় ।
যবে হায় প্রাণপণ করে তাহা সমাপন
খেলারই মতন ভেঙে যায় ।
(কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ)