পূর্ণিমার জাগরণে
– শামসুর রাহমান
সমাজের বিভিন্ন কন্দরে কিংবা খোলামেলা ঘাটে
কীভাবে সম্পর্ক এই মনুষ্য সমাজে
ভীষণ হোঁচট খেয়ে পঙ্গু হয়ে যায়, অনেকেই
সহজে পায় না টের। কালো মেঘ গ্রাস করে সারা উজ্জ্বলতা।
কিছু কেঠো সামাজিকতার আবরণ
হয়তো-বা রয়ে যায় বাসি, পচা খাদ্যের ধরনে,
যেমন নদীর ঠোঁটে ঢেউগুলো চুমো খাওয়ার পরেও
ভেজা বালি রোদের ধমকে শুক্নো, ধুধু
অবয়বে টিকে থাকে। আন্তরিক পরিচয় পথ
ভুলে অমাবস্যার খপ্পরে পড়ে গেলে ঘটে বটে বিপর্যয়।
এই যে এখনও খুব চড়া রোদ ছায়াময় তিয়াত্তর
বছর বয়সে নিত্য পলায়নপর
কবিতা নামের নিরুপমার পেছনে
পেছনে আপ্রাণ ছুটি, সে কি নির্বুদ্ধিতা
আমার? খেয়াল শুধু? যখন অনেকে দ্বিপ্রহরে
কিংবা সন্ধ্যারাতে গল্প গুজবে বেজায় মেতে রাতে
গৃহিণীর আলিঙ্গনে সুখে ঘুমের চুমোয় মজে থাকে, আমি
তখন চেয়ারে বসে আকাশ পাতাল ভেবে চলি।
সমাজ সংসার সব ভুলে সুফী সাধকের মতো ধ্যানে,
মগ্নতায় সফেদ পাতায় পংক্তিমালা
সৃজনে মাতাল হই-জানি না এসব কিছু উন্মাদের স্বপ্ন
নাকি কিছু বেখাপ্পা প্রলাপ।
জানি, জীবনের নানা বাঁকে প্রচুর ভ্রুকুটি আর
বিষাক্ত সমালোচনা সাপের মতোই
প্রকাশ্যে কি অপ্রকাশ্যে আমাকে ছোবল
মেরেই চলেছে-নিয়তির এই আঁকিবুকি, বলো,
কীভাবে এড়িয়ে যাবো? তবু অমাবস্যার শক্রতা
কুটোর মতোই ভেসে যায় একদিন পূর্ণিমার জাগরণে।
(ভাঙাচোরা চাঁদ মুখ কালো করে ধুকছেকাব্যগ্রন্থ)