আত্মজৈবনিক : বুদ্ধদেব বসু

5/5 - (1 vote)
  • আত্মজৈবনিক
  • বুদ্ধদেব বসু
  • বাতিঘর
  • ৪৫০ টাকা
রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে গিয়ে যে পাঁচজন সাহিত্যিক সাহিত্য রচনায় ব্রতী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু অন্যতম। বর্ণিল সাহিত্যিক জীবনে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধসহ নানাবিধ রচনা উপহার দিয়েছেন পাঠককে। ‘আত্মজৈবনিক’ রচনায় লেখকের শৈশব, যৌবন এবং যৌবন পরবর্তী সাহিত্যচর্চার ফিরিস্তি প্রদান করেছেন। বইটিকে সহজ অর্থে আত্মজীবনী বলার চাইতে বাংলা সাহিত্যের কয়েক যুগের ইতিহাস বলা যেতে পারে।
বুদ্ধদেব বসুর জন্ম কুমিল্লায়। পিতা ছিলেন উকিল এবং পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরে। জন্মের পরপরই ধনুষ্টংকার রোগে মা মারা যাওয়ায় পিতা গৃহত্যাগী হন। এরপর বুদ্ধদেব বসুর দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় মাতামহের উপর। কুমিল্লা থেকে চলে যান নোয়াখালিতে। শৈশবের পুরো সময়টাই কাটে মেঘনা নদীর কোলে গড়ে উঠা শহরে। তবে লেখকের দৃষ্টিতে নোয়াখালির মেঘনা অন্যতম হতশ্রী নদী ছিল। মেঘনা নদীর ভাঙনে একসময় শহরের অনেক অংশই তলিয়ে যায়, যা অবলোকন করে ব্যথিত হয়েছেন লেখক। চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়ে প্রথম প্রেমে পড়া, দাদামশায়ের নিকট ইংরেজির পাঠ নেওয়া, সাহিত্যের সাথে পরিচিতি, কবিতা লেখা ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ের স্মৃতিচারণ উঠে এসেছে ‘আমার ছেলেবেলা’ অংশে।


ঢাকা কলিজিয়েট স্কুল থেকে পঞ্চম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আইএ পাস করার পর ১৯৩০ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স পড়তে। ততদিনে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা বের হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সাহিত্য রচনার দ্বার যেন আরো ভালোভাবে উন্মোচিত হলো। বন্ধু-বান্ধবের সাথে সাহিত্য আড্ডা, সভা-সেমিনার, কাজী নজরুল ইসলামকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে কবিতা পাঠ করে সময় ভালোই কাটছিল। এমনকি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে জয়ীও হয়েছিলেন। লেখকের বর্ননায় ঢাকাকে যেন নতুন করে দেখতে পেলাম। কী অসাধারণ সব বর্ননার ভাষা! তবে একসময় ঢাকা ছেড়ে কলকাতায় স্থায়ী হন বুদ্ধদেব বসু। সেখানেই বিয়ে করেন ঢাকার মেয়ে রাণু সোমকে। যার সাথে পরিচয় হয়েছিল গান রেকর্ডিং এর মাধ্যমে। অধ্যাপনার বিরাট একটা সময় কাটিয়েছেন রিপন কলেজে, পাশাপাশি ক্ষুরধার কলমও চলেছে। যৌবনের পাঠ চুকিয়ে প্রৌঢ়ত্বের স্বাদ যখন গ্রহণ করলেন তখন তিনি নন্দিত এবং নিন্দিত উভয়ই। অশ্লীলতার দায়ে যখন বই নিষিদ্ধ হলো, বই প্রকাশের জন্য প্রকাশক পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন নিজেই প্রকাশক হয়ে বই প্রকাশ করেছেন। তাতে জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকুও।


বইটির ভাষা একটু কঠিন মনে হতে পারে। কারণ ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ কিংবা যৌবনের বর্ননায় লেখক শুধু সাহিত্যকেই প্রাধান্য দিয়েছেন কঠিন শব্দচয়নে। তবুও বইটি অসাধারণ। মিশে গেছে এপার-ওপার বাংলার সাহিত্য দর্শন। নিছক আত্মজীবনী নয়, বরং একটি যুগের অসামান্য জীবন্ত ছবি।


ক্রেডিট : sanowar hossin

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *